জাতীয় স্বার্থে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সোমবার বৈঠক করেছেন বলে দাবি করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী।
তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত কোনো কারণে নয়, জাতীয় স্বার্থে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল আমাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে আমরা আলেম-উলামাদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধ এবং কওমি মাদ্রাসা খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছি।’
মঙ্গলবার খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব কথা বলেন আল্লামা বাবুনগরী।
হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের মধ্যে সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করতে যান বাবুনগরী। এদিন রাত ৮টা ৩৭ মিনিটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসভবনে প্রবেশ করেন ধর্মভিত্তিক সংগঠনটির প্রধান। তার সঙ্গে ছিলেন হেফাজতের মহাসচিব নূরুল ইসলাম জিহাদী।
প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে গণমাধ্যমকে এড়িয়ে মন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসা থেকে একটি কালো মাইক্রোবাসে করে চলে যান তিনি। এ সময় তার সঙ্গে থাকা হেফাজতের মহাসচিব নূরুল ইসলাম জিহাদীও সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
এর এক দিন পর বাবুনগরী জানালেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের দাবিদাওয়া মেনে নেয়ার মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি সরকার দ্রুত আমাদের দাবিগুলো মেনে আলেম-উলামাদের মুক্তি দেবেন।’
খিলগাঁওয়ের ওই বৈঠকে বাবুনগরী আরও বলেন, ‘সারা দেশে অসংখ্য নিরীহ আলেম-উলামাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বৈঠকে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিষয়গুলো তুলে ধরেছি।
‘আমরা জানিয়েছি হেফাজতের বিরুদ্ধে কথিত যে সহিংসতার অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। হেফাজতের কোনো নেতা-কর্মী সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত ছিল না।’
হেফাজতের আমির বলেন, ‘কিছু দুষ্কৃতকারী হেফাজতের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছে। তাদের খুঁজে বের করা দরকার। নিরীহ আলেম-উলামাদের এসবের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।’
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের মহাসচিব নূরুল ইসলাম জিহাদী, সিনিয়র নায়েবে আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল আওয়াল, প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী, মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সুবহানী এবং মাওলানা জহুরুল ইসলাম।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় দেশজুড়ে তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম। এরপর থেকেই ধর্মীয় সংগঠনটির ওপর চড়াও হয় সরকার।
সংগঠনটির শীর্ষ পর্যায়ের অন্তত ৫০ নেতাকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সবাইকে সহিংসতার একাধিক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তার থামাতে এর মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তিনবার হেফাজতের মহাসচিব নূরুল ইসলাম জিহাদীর নেতৃত্বে সাক্ষাৎ করে সংগঠনটির একটি প্রতিনিধিদল। কিন্তু ধরপাকড় থামছে না। এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে নিজেই দেখা করতে এসেছিলেন সংগঠনের আমির বাবুনগরী।
হেফাজতে ইসলামের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, স্বাস্থ্য চেকআপের উদ্দেশে সোমবার সকালে হাটহাজারী থেকে ঢাকায় পৌঁছান বাবুনগরী। তবে তার মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করা।